ছবি: ভরের কাগজ

প্রিয় ঋতুতে স্তব্ধ হয়েছিল বিশ্বকবির কাব্য রচনা

তার প্রিয় ঋতু ছিল বর্ষা। আজ থেকে ৮২ বছর আগে বর্ষায় বর্ষণমুখর রাতে স্তব্ধ হয়েছিল তার দিন-রাত্রির কাব্য রচনা। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের এই দিনে বিদায় নিয়েছিলেন বাঙালির প্রাণের মানুষ ও রুচির নির্মাতা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

আজ রবিবার (৬ আগস্ট) ২২ শ্রাবণ বিশ্ববরেণ্যে এই বাঙালির ৮২তম প্রয়াণবার্ষিকী।

৮০ বছর বয়সে চলে গেলেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এ মৃত্যু দেহান্তর মাত্র। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অনেক কিছুরই প্রথম রূপকার তিনি। তার হাত ধরেই বাংলা সাহিত্য নতুন যুগের সৃষ্টি হয়। বাংলা গদ্যের আধুনিকায়নের পথিকৃৎ রবিঠাকুর ছোটগল্পেরও জনক। গল্পে, উপন্যাসে, কবিতায়, প্রবন্ধে, নতুন নতুন সুরে ও বিচিত্র গানের বাণীতে, দার্শনিক চিন্তাসমৃদ্ধ প্রবন্ধে, এমনকি চিত্রকলায়ও রবীন্দ্রনাথ চির নবীন-চির অমর।

বহু প্রতিভার এক আপন সত্ত্বার অধিকারী এই কবি তার প্রতিভার আলোয় উদ্ভাসিত করে বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতিকে তুলে ধরেছিলেন বিশ্ব দরবারে। পেয়েছিলেন বিশ্বকবির সম্মান। তিনিই বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ কবি।

বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক অধ্যাপক সৈয়দ আকরম হোসেন বলেন, রবীন্দ্রনাথকে ঘিরে জমিদারতন্ত্রের মিথ আমাদের সমাজে প্রচলিত রয়েছে; কিন্তু রবীন্দ্রনাথ আগাগোড়া একজন স্বনির্মিত মানুষ। তিনি পারিবারিক ব্যবসায়ের সূত্রে পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন জেলায় এসেছেন; এসব অঞ্চলের সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নের চেষ্টা যেমন করেছেন- তেমনি রবীন্দ্রসাহিত্যে নতুন গতিপথের প্রেরণাও দিয়েছেন পূর্ববঙ্গের সাধারণ মানুষ। রবীন্দ্রনাথ

আজো আমাদের রুচি গঠনের, চেতনার উন্মেষের প্রধান অবলম্বন। আমাদের জাতীয় সংগীতের পাশাপাশি ‘বাংলাদেশ’ নামের বানানটিও আমরা রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকেই পেয়েছি। বিশ্বভ্রমণেও কবি ছিলেন অনন্য। তিনি ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত ৫টি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন।

বাঙালির রুচি ও সংস্কৃতির নির্মাতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্য প্রতিভার উন্মেষ ঘটেছিল শৈশবেই মাত্র আট বছর বয়সে। বিচিত্র তার বিষয়, বিপুল তার পরিমাণ। লেখালেখি ও চিত্রকর্ম করার পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিক্ষাবিস্তার, সাংগঠনিক কর্ম এবং সমাজকল্যাণমূলক কাজেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।

১৮৭৪ সালে ‘তত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। এরপর সে আলো ছড়িয়ে গেল সবখানেই। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতিলাভ করেন। লিখেছেন বাংলা ও ইংরেজি ভাষায়। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনুদিত হয়েছে। বিভিন্ন দেশের পাঠ্যসূচিতে তার লেখা সংযোজিত হয়েছে। ১৮৭৮ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘কবিকাহিনী’ প্রকাশিত হয়। এ সময় থেকেই কবির বিভিন্ন ঘরানার লেখা দেশ-বিদেশে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ পেতে থাকে। ১৯১০ সালে প্রকাশিত হয় তার কাব্যগ্রন্থ ‘গীতাঞ্জলী’। এই কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান।

১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন কবি। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠা করেন ‘বিশ্বভারতী’। এখানে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান।

১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলী কাব্যগ্রন্থের জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল পুরস্কার বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বসাহিত্যের দরবারে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করে। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধেও কবির গান সাহস ও প্রেরণা জুগিয়েছে। সব মিলিয়েই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় বাঙালির হৃদয়ে চির অম্লান হয়ে আছেন।

কর্মসূচি : রবীন্দ্র প্রয়াণ দিবসে ‘আঘাত করে নিলে জিনে’ শিরোনামের বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ছায়ানট। সন্ধ্যা ৭টায় ছায়ানট মিলনায়তনের এই আয়োজন বরাবরের মতোই সবার জন্য উন্মুক্ত। একই সঙ্গে অনুষ্ঠানটি ছায়ানটের ফেসবুক পেইজে (ভধপবনড়ড়শ.পড়স/পযযধুধহধঁঃ১৯৬১) সরাসরি অনলাইনে দেখা যাবে। এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে বাংলা একাডেমি বেলা ১১টায় আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে একক বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে রয়েছে বঙ্গবন্ধু স্মারক বক্তৃতা এবং শিল্পের আলোয় শ্রদ্ধাঞ্জলি : রবীন্দ্রনাথ ও বঙ্গবন্ধু। চ্যানেল আই আয়োজন করেছে রবীন্দ্রবিষয়ক আলোচনা, গান এবং রবীন্দ্রনাথের কবিতা থেকে আবৃত্তি ও নাটক।

এছাড়া বিশ্বকবির প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতার এবং বেসরকারি টেলিভিশনগুলো এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা ও নাটক প্রচার করবে।

এমকে


সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।