ভারতে নিট মেডিকেল প্রবেশিকা পরীক্ষায় ব্যর্থতা মেনে নিতে না পেরে আত্মহত্যা করেন ১৯ বছরের তরুণ। এর একদিন পরই তাঁর বাবাকে বাড়ি থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানায় ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের রাজধানী চেন্নাইয়ে।
২০২২ সালে ৪২৭ নম্বর নিয়ে দ্বাদশ শ্রেণি পাস করেন জগদীশ্বরণ। দুইবার চেষ্টা করেও প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি। গত শনিবার (১২ আগস্ট) বাবা তাঁকে ফোনে পাচ্ছিলেন না। পরে জগদীশ্বরণকে তাঁর ঘরে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। পরদিন সকালে তাঁর বাবা সেলভাসেকারেরও মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ জানায়, ছেলের মৃত্যু শোকেই সেলভাসেকার গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আত্মহত্যার চিন্তা মাথায় না এনে, আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে। বেঁচে থাকতে হবে।’
২০২১ সালে তামিলনাড়ুর রাজ্য পার্লামেন্টে নিট পরীক্ষা বাতিল করার একটি বিল পাস হয়। ওই বিলে বলা হয়, এমন পরীক্ষায় প্রাইভেট কোচিংয়ের সামর্থ্য আছে এমন সচ্ছল পরিবারের সন্তানেরা বাড়তি সুবিধা পায়। দরিদ্র পরিবার ও গ্রামীণ এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য এটি কঠিন হয়, এমনকি তারা দ্বাদশ শ্রেণিতে ভালো নম্বর পেয়েও অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়ে।
প্রায় এক দশক আগে ভারত মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার জন্য দ্বাদশ শ্রেণির নম্বরের ওপর ভিত্তিতে যোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য প্রবেশিকা পরীক্ষা চালু করে। অনেক দীর্ঘসূত্রতার পর গভর্নর আরএন রবি এ বিল ফেরত পাঠিয়ে দেন। পরে বিলটি আবার পাস হলে তা রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুরমুর কাছে পাঠানো হয়।
গতকাল সোমবার তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিন বলেন, ‘আমরা যে রাজনৈতিক পরিবর্তন আনতে চাইছি তা বাস্তবায়িত হলে কয়েক মাসের মধ্যে এ নিট পরীক্ষা নামক দেয়াল ভেঙে পড়বে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিট ব্যবস্থা শুধু সেসব শিক্ষার্থীরই পক্ষে যারা ২–৩ বছরের প্রস্তুতির জন্য লাখ লাখ টাকা খরচ করতে পারে। যারা দ্বাদশ শ্রেণিতে তুলনামূলক কম নম্বর পায় তারাও নিটে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারে। তারা এমন এক ব্যবস্থার তৈরি করেছে যেখানে মেডিকেল শিক্ষা ব্যবস্থা কেবল ধনী ও সচ্ছলদের জন্যই সংরক্ষিত।’
মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিনের বরাত দিয়ে এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের সরকারি বিদ্যালয় থেকে দরিদ্র শিক্ষার্থীরা মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পায় শুধু সংরক্ষিত ৭ দশমিক ৫ শতাংশ আসনের কল্যাণে।
কিছুদিন আগে গভর্নর রবি নিটে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের শুভেচ্ছা জানান। এ অনুষ্ঠানে তিনি এক অপ্রস্তুত প্রশ্নের মুখোমুখি হন। নিট পরীক্ষা বাতিল চান এমন এক উত্তীর্ণ প্রার্থীর অভিভাবক বলেন, তিনি তাঁর মেয়ের কোচিংয়ের জন্য কয়েক লাখ টাকা ব্যয় করেছেন কিন্তু সব অভিভাবকের সে সামর্থ্য হবে না। তখন গভর্নর বলেন, এ সংক্রান্ত বিল এখন রাষ্ট্রপতির হাতে এবং তিনি তা কখনোই সই করবেন না।
রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মা সুব্রামানিয়ান গভর্নরের এই মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন। তাঁর বক্তব্যকে ‘বিভ্রান্তিকর’ বলে মন্তব্য করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির কাছে বিল পৌঁছে দেওয়া ছাড়া এখানে তাঁর আর কোনো ভূমিকা নেই।’