ভারতের মণিপুরে চুরাচাঁদপুর জেলার একজন বিবাহিত নারী (৩৭) গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, ২০২৩ সালের ৩ মে তাদের বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। তখন তিনি তার দুই ছেলে, ভাগ্নি এবং ভগ্নিপতিকে নিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাচ্ছিলেন। পথে একদল দুর্বৃত্তর হাতে ধরা পড়ে যান এবং তাদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হন।
মে মাসের শুরুর দিকে মণিপুরে জাতিগত সংঘর্ষের সময় একের পর এক যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটতে থাকে। তখনকার আরেকটি ভয়ঙ্কর ঘটনা প্রকাশ্যে আসলো এবার।
নির্যাতনের শিকার নারী জানিয়েছেন সেই ভয়াবহ দিনের কথা। বুধবার ৯ আগস্ট বিষ্ণুপুর থানায় পুলিশের কাছে করা ‘জিরো এফআইআর’ মামলায় তিনি জানান, “আমি আমার ভাগ্নিকে আমার পিঠে নিয়েছিলাম এবং আমার দুই ছেলেকেও ধরেছিলাম এবং আমার ননদের সাথে ঘটনাস্থল থেকে দৌড়াতে শুরু করি। সেও একটি বাচ্চাকে পিঠে নিয়ে আমার সামনে দৌড়াচ্ছিল। তারপর আমি হোঁচট খেয়ে নিচে পড়ে যাই।
রাস্তায় উঠতে না পারায় আমার ননদ ছুটে এলেন এবং আমার ভাগ্নিকে আমার পিছন থেকে তুলে নিয়ে আমার দুই ছেলের সাথে ছুটলেন। ততক্ষণে প্রায় পাঁচ-ছয়জন দুষ্কৃতকারী আমাকে ধরে ফেলে এবং তারা আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও লাঞ্ছিত করে। আমাকে ওরা জোর করে নিচে নামিয়ে যৌন নির্যাতন করে।
![Reneta June](https://ashraful.ai/wp-content/uploads/2023/06/Reneta-April-2023.gif)
তিনি এনডিটিভিকে বলেন, নারীরা যে অকল্পনীয় ভয়াবহতার মধ্য দিয়ে গেছে সে সম্পর্কে কথা বলার রিপোর্ট দেখে তিনি পুলিশের কাছে যাওয়ার সাহস সঞ্চয় করেছে। পুলিশ তাদের উৎসাহিত করায় আরও বেশি সংখ্যক মহিলা পুলিশের কাছে আসছেন। তারা যে বর্বরতার মুখোমুখি হয়েছিল তা বর্ণনা করছে।
পুলিশ বলেন, নির্যাতনের এই নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ডি, ৩৫৪, ১২০বি এবং ৩৪ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে বিষ্ণুপুরে বাস্তুচ্যুতদের একটি ত্রাণ শিবিরে বসবাস করছেন।
এনডিটিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, মণিপুর পুলিশ মঙ্গলবার ৮ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছে, ৩ মে থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত প্রায় তিন মাসের মধ্যে ৬ হাজার ৫০০টিরও বেশি মামলা দায়ের হয়েছে।
নারীটি জানান, তার স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় রাজ্যের রাজধানীর আঞ্চলিক ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সে গিয়েছিলেন, কিন্তু লজ্জায় কোনও ডাক্তারকে না দেখিয়েই ফিরে আসেন। পরবর্তীকালে তার অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় আবার হাসপাতালে গেলে সেখানকার ডাক্তাররা তাকে চিকিৎসা ও পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করেন। তিনি বলেন, যারা আমাকে যৌন নির্যাতন ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে তাদের পর্যাপ্ত শাস্তি দাবি করছি।
প্রসঙ্গত গত মাসে, মণিপুরে একদল পুরুষের দ্বারা রাস্তায় নগ্ন হয়ে দুই মহিলার কুচকাওয়াজ করার একটি ভয়ঙ্কর ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে শেয়ার করা হয়েছিল। ভিডিওতে দেখে আসামিদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।