aWhZUtMjQNDYwLTEOTIxMTgyODRiZGpvdXJuYWwuanBn
ছবি: বিডি জার্নাল

ফরিদপুর জেলার সদরপুরে এক গৃহবধূকে হত্যার পর লাশ সেফটিক ট্যাংকে লুকিয়ে রাখার ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী ও প্রধান আসামি ঘাতক স্বামী হাবুল বেপারীকে (৩৮) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১।

মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর তুরাগ থানার কামারপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‍্যাব জানায়, স্ত্রীর প্রতি ক্ষোভ ও পরকীয়ার সন্দেহে রাবেয়াকে হত্যার পরিকল্পনা করেন স্বামী হাবুল। হাবুল তার দুলাভাই সূর্য্য মোল্লাকে নিয়ে হত্যার পরিকল্পনার করেন। সূর্য্য মোল্লার ভিকটিম রাবেয়ার প্রতি পূর্ব থেকেই ক্ষোভ ছিল। পাশাপাশি রাবেয়ার কাছ থেকে নেয়া টাকা ফেরত না দেয়ার কৌশল হিসেবে হত্যায় সহযোগিতা করেন সূর্য্য।

মঙ্গলবার কাওরানবাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ১৩ আগস্ট ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলার ঢেউখালী এলাকায় ঘরের পেছনে সেফটিক ট্যাংকের ভিতর থেকে গৃহবধূ রাবেয়া বেগেরে অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এ ঘটনায় ভিকটিমের ভাই বাদী হয়ে ফরিদপুর জেলার সদরপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। এরই সূত্র ধরে র‌্যাব এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজদারী বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে ঘাতক স্বামী হাবুলকে গ্রেপ্তার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হাবুল হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে র‍্যাবকে জানিয়েছেন, ৭ বছর আগে রাবেয়ার সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই রাবেয়ার বাবার বাড়িতে থাকতেন। গত কয়েক মাস ধরেই তার স্ত্রীর প্রতি ক্ষোভ ছিল। স্ত্রী রাবেয়ার পরকীয়ার ব্যাপারে সন্দেহ করতেন হাবুল। এছাড়াও হাবুলের স্থায়ী কোন কাজ ছিল না। সে মাঝে মাঝে ফার্নিচার দোকানে রং মিস্ত্রির কাজ করত। ফলে স্ত্রীর তুলনায় আয় কম ছিল। রাবেয়া বেসরকারি একটি এনজিওতে মাঠকর্মী হিসেবে কাজ করত।

খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, হাবুলের উপার্জন কম থাকায় প্রায়শই সে স্ত্রীর কাছে বিভিন্ন খরচের জন্য টাকা চাইত। যেহেতু রাবেয়ার আয়ের টাকা দিয়ে সন্তানদের পড়াশোনার খরচসহ সংসারের যাবতীয় ব্যয় চালাত। এ জন্য স্বামী হাবুলের টাকা দিত না। যার ফলে রাবেয়ার প্রতি হাবুলের পরকীয়ার সন্দেহ আরও বেড়ে যায়। হাবুলের দুলাভাই সুর্য্য মোল্লা বিভিন্ন সময়ে রাবেয়ার কাছ থেকে বেশকিছু টাকা ধার নিয়েছে এবং ধারকৃত টাকা পরিশোধের জন্য রাবেয়া চাপ প্রয়োগ করলে সূর্য্য মোল্লার সঙ্গে কথা কাটাকাটি এবং ঝগড়া হতো।

একপর্যায়ে হাবুল স্ত্রীর প্রতি ক্ষোভ ও পরকীয়ার সন্দেহে রাবেয়াকে হত্যার পরিকল্পনা করে। হাবুল তার দুলাভাই সূর্য্য মোল্লাকে পরিকল্পনার বিষয়টি জানায়। সূর্য্য মোল্লার রাবেয়ার প্রতি পূর্বের ক্ষোভ থাকায় হত্যা পরিকল্পনায় যুক্ত হয়। কারণ রাবেয়া না থাকলে ধারের টাকা দিতে হবে না। এই চিন্তা থেকেই শ্যালক হাবুলের হত্যা পরিকল্পনার সঙ্গে সহযোগিতা করতে রাজি হয়।

পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১১ আগস্ট রাতে হাবুল ও তার দুলাভাই রাবেয়ার বাড়িতে আসে এবং বাসার সকলে একত্রে রাতের খাবার খায়। রাত আনুমানিক ১০টা ৩০ মিনিট সন্তানেরা রাতের খাবার শেষে ঘুমিয়ে পড়ে। এ সময় হাবুল, সূর্য্য মোল্লা ও রাবেয়া চেয়ারে বসে আলাপচারিতা করছিল। একপর্যায়ে হাবুল সুযোগ বুঝে অতর্কিতভাবে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে ও হাবুলের দুলাভাই রাবেয়ার হাত পিছন থেকে চেপে ধরে নির্মমভাবে হত্যা করে।

হত্যাকান্ডের বিষয়টি কেউ যেন জানতে না পারে এজন্য রাবেয়ার মরদেহ গুম করতে ঘরের পিছনের দরজা দিয়ে বের করে টয়লেটের সেফটিক ট্যাংকির মধ্যে ফেলে দেয়। হাবুলের দুলাভাই রাতেই ঘটনাস্থল ত্যাগ করে আত্মগোপনে চলে যায়। হত্যাকান্ডের পরের দিন সকালে নিহতের মা হাবুলের কাছে রাবেয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে এনজিও’র কাজে অফিসে গিয়েছে বলে জানায় এবং তার শাশুড়ীকে সন্তানদের স্কুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলে।

একপর্যায়ে হাবুল তার শাশুড়ীকে জানায়, জরুরী কাজে তাকে ঢাকা যেতে হবে। এই কৌশলে এলাকা ছেড়ে ঢাকায় আসার পরিকল্পনা করে। হাবুল আত্মগোপনে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হওয়ার পূর্বে সে বেশকিছু স্বর্ণ ও রুপার অলংকার এবং টাকা নিয়ে রাজধানীর তুরাগ থানার কামারপাড়া এলাকায় আত্মগোপনে চলে যায়।

আরও পড়ুন: সুদের টাকা না পেয়ে নারী শ্রমিককে হত্যা মামলার আসামি গ্রেপ্তার

হাবুল ৭ থেকে ৮ বছর আগে কামারপাড়া এলাকায় ফার্নিচারের দোকানে রং মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করত। দীর্ঘদিন এলাকায় কাজ করার সুবাদে তার অনেক পরিচিতি এবং বন্ধু-বান্ধব ছিল। সে বন্ধুদের কাছে আত্মগোপনে থাকার পরিকল্পনা করছিল বলে জানা যায়। হাবুল বাড়ী থেকে চলে যাওয়ায় তার শাশুড়ীর সন্দেহের সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে মা এনজিও অফিসে ফোন করে জানতে পারে অফিস বন্ধ এবং ভিকটিম অফিসে যায়নি। পরে ভিকটিমের আত্মীয়স্বজনসহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি শুরু করেন।

খোঁজাখুজির এক পর্যায়ে গত ১৩ আগস্ট বসত ঘরের পিছনের টয়লেটের সেপটিক ট্যাংকি এর ঢাকনা এলোমেলো দেখতে পেয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হলে ঢাকনাটি সরিয়ে ভিকটিমের অর্ধগলিত মরদেহ দেখতে পান।

নিহত রাবেয়া এবং হাবুলের উভয়ের দ্বিতীয় বিবাহ ছিল। রাবেয়ার আগের সংসারে ১৬ বছরের একটি কন্যা সন্তান এবং বর্তমান সংসারে একটি পুত্র ও একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/সুজন/আরআই


সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।