Untitled  Recovered samakal eb
ছবি: সমকাল

এক মাসের ব্যবধানে সিলেটের ওসমানীনগর ও গাজীপুরে পৃথক ঘটনায় পাঁচজনের রহস্যজনক মৃত্যুর বিষয়টি পুলিশসহ বিভিন্ন তদন্ত সংস্থাকে ভাবিয়ে তুলেছে। দুটি ঘটনাতেই অপরাধের কিনারা করতে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান আলামত পাওয়া যায়নি। তবে মৃত্যুর ধরন ও নতুন কিছু সূত্র নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন তদন্তকারীদের মনে। ঘরে-বাইরে মৃত্যুর নতুন ফাঁদ কিনা, তা নিশ্চিত করতে পুলিশ বিশেষজ্ঞদের মতামত নিচ্ছে।

দুই ঘটনায় তদন্তের সঙ্গে যুক্ত একাধিক উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা জানান, সিলেটে তিন প্রবাসীর মৃত্যুর ঘটনাটি ‘হত্যাকাণ্ড’ হতে পারে; এর সপক্ষে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য-প্রমাণ তাদের হাতে নেই।

সিলেটের ঘটনার তদন্তকে আলামতের মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে নিতে এরই মধ্যে প্রবাসীর বাসা থেকে জেনারেটরের ধোঁয়া কৃত্রিমভাবে তৈরি করে তা পরীক্ষার জন্য ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কাছে পাঠিয়েছে পুলিশ।
কেন এ ধরনের ধোঁয়া পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে- জানতে চাইলে সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন সমকালকে বলেন, ঘটনার রাতে ওই বাসায় বিদ্যুৎ ছিল না। তখন তাঁরা বাসার সব দরজা-জানালা বন্ধ করে চায়নিজ জেনারেটর চালিয়ে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে। বদ্ধ ঘরে জেনারেটর থেকে কোনো ধরনের বিষাক্ত গ্যাস নিঃসরণ হয়ে তাঁরা মারা গেছেন কিনা, এটা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। ঘটনার পর ওই জেনারেটর চালানোর জন্য বাদবাকি যে জ্বালানি ছিল, তা দিয়ে সেটি আবার চালু করে ঘরের ভেতরে কৃত্রিমভাবে ধোঁয়া তৈরি করে আলামত পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা প্রতিবেদন পাওয়া গেলেও বোঝা যাবে, কী কারণে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। ওই দুই প্রতিবেদন শিগগির আমরা পাচ্ছি। এ ছাড়া ওই বাসার ভেতরে যেসব খাবার ছিল, তা-ও পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।’ সর্বশেষ গাজীপুরে প্রাইভেটকারের ভেতরে শিক্ষক দম্পতির মৃত্যুর কিনারা নিয়েও নানামুখী তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে পুলিশ। প্রাইভেটকারের এসি থেকে নির্গত কোনো গ্যাসের বিষক্রিয়ায় মর্মন্তুদ এই মৃত্যু কিনা, তা পরীক্ষা করা হচ্ছে। জেলা পুলিশের পাশাপাশি দুটি ঘটনার ছায়াতদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

পিবিআইর প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, সিলেট ও গাজীপুরের দুটি ঘটনা তদন্ত সংস্থাকে নতুনভাবে চিন্তাভাবনার মধ্যে ফেলেছে। নিখুঁত হত্যাকাণ্ড ধরেই তদন্ত শুরু করলেও অন্য আরও কয়েকটি বিষয়ের প্রতি বিশেষভাবে খেয়াল রাখা হচ্ছে। বিষক্রিয়ার আশঙ্কায় চুলচেরা বিশ্নেষণের জন্য বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। এটাও দেখতে হবে যে, বিষক্রিয়া হলেও এর পেছনে কোনো মানুষের হাত ছিল কিনা। তিনি জানান, দুটি ঘটনায় চূড়ান্তভাবে মন্তব্য করার মতো কোনো ক্লু এখনও পাওয়া যায়নি।

গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার ডিআইজি মোল্যা নজরুল ইসলাম জানান, বিআরটিএর মাধ্যমে গাড়ির নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে গাড়ির ভেতরের গ্যাসজনিত কিছু ত্রুটি পাওয়া গেছে। এ কারণে শিক্ষক দম্পতির মৃত্যু হয়েছে কিনা, তা ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ও ভিসেরা প্রতিবেদন পাওয়া গেলে পরিস্কার হতে পারে। গাড়ির এসি ও গ্যাসের আরও বিশদ পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।

অপর একজন কর্মকর্তা জানান, গাজীপুরের ঘটনায় শিক্ষক কে এম জিয়াউর রহমানের নিথর দেহ তাঁর প্রাইভেটকারের চালকের আসনে ছিল। তাঁর হাত স্টিয়ারিংয়ের ওপরে ছিল। পাশের সিটে ছিল তাঁর স্ত্রী মোসাম্মৎ মাহমুদা আক্তার জলির নিথর দেহ। তদন্তকারীদের অভিমত, দেশে এমন কোনো প্রযুক্তির খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি, যার দ্বারা চলন্ত প্রাইভেটকারের ভেতরে কাউকে এভাবে হত্যা করা যায়। তাঁদের শরীরে বাহ্যিকভাবে কোনো ধরনের আঘাতের চিহ্ন নেই। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত তাঁদের সঙ্গে কারও বড় ধরনের শত্রুতার তথ্য পুলিশের কাছে আসেনি। প্রাইভেটকারের ভেতর থেকে টাকা-পয়সাসহ কোনো গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্রও খোয়া যায়নি।

গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে শিক্ষক দম্পতির লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। সেখানে তাঁদের দু’জনের ফুসফুস ও কিডনিতে জমাট রক্ত পাওয়া গেছে। এটা খাবারে বিষক্রিয়া বা অন্য কারণেও হতে পারে। তাঁদের শরীরের বিভিন্ন নমুনা ঢাকায় সিআইডি ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশের আরেক কর্মকর্তা জানান, এসি থেকে নির্গত গ্যাসের বিষক্রিয়ায় মৃত্যুর নজির দেশে রয়েছে। সর্বশেষ ২০ আগস্ট ঝালকাঠির রাজাপুরে মুদি দোকানি ফোরকান হাওলাদার ও তাঁর স্ত্রী মাহিনুর বেগমের এমন মৃত্যু হয়।

দেশের বিভিন্ন এলাকায় দুর্ঘটনার পর রাসায়নিক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছে ডিএমপির বোমা নিষ্ফ্ক্রিয়করণ দল। এই দলের প্রধান এডিসি রহমত উল্লাহ চৌধুরী বলেন, গাড়ির ক্ষেত্রে এক্সস্ট সিস্টেমে ত্রুটি থাকলে বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হতে পারে। আবার ঘর আবদ্ধ থাকলেও সেখানে কার্বন মনোক্সাইডসহ অন্য ক্ষতিকর গ্যাস জমতে পারে। বিষাক্ত গ্যাসের কারণে মৃত্যুর একাধিক ঘটনা অতীতে ঘটেছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহিনুর ইসলাম বলেন, গাজীপুরের ঘটনায় গাড়ির রেফ্রিজারেন্ট পরীক্ষা করা যেতে পারে। কোনো জায়গায় অক্সিজেন কম থাকলে সেখানে কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস তৈরির আশঙ্কা থাকে। আবার গাড়িতে কেউ বিষাক্ত কিছু আগে থেকে রেখে স্লো-পয়জনিংয়ের মাধ্যমে মৃত্যুর ফাঁদ পেতেছিল কিনা, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

২৫ জুলাই ওসমানীনগরের বড় ধিরারাই গ্রামে মর্মন্তুদ ঘটনা ঘটে। যুক্তরাজ্য থেকে ফেরার পর প্রবাসী রফিকুল ইসলাম তাঁর স্ত্রী, কন্যা ও দুই ছেলে নিয়ে বাসার একটি কক্ষে ঘুমান। অপর দুটি কক্ষে শ্বশুর, শাশুড়ি, শ্যালক, শ্যালকের স্ত্রী ও শ্যালকের মেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। পরদিন সকালে অনেক ডাকাডাকি করেও রফিকুল ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের কোনো সাড়াশব্দ মিলছিল না। ৯৯৯-এর ফোন পেয়ে পুলিশ এসে দরজা ভেঙে অচেতন অবস্থায় তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়। চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম ও তাঁর ছোট ছেলে মাইকুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১১ দিন থাকার পর মারা যান রফিকুলের মেয়ে সামিরা। বেঁচে গেছেন প্রবাসীর স্ত্রী হোসনে আরা ও বড় ছেলে সাদিকুল।

এরপর গত ১৮ আগস্ট গাজীপুর মহানগরের গাছা থানার দক্ষিণ খাইলকুর বগারটেক এলাকায় প্রাইভেটকারের ভেতর থেকে শিক্ষক দম্পতি কে এম জিয়াউর রহমান ও মোসা. মাহমুদা আক্তার ওরফে জলির লাশ উদ্ধার করা হয়। জিয়াউর গাজীপুরের টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন।


সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।