image
ছবি: ঢাকা টাইম

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক রাষ্ট্রদূত নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, আওয়ামী লীগ সংবিধান সংশোধন করার কারণে দেশের সর্বত্র সংকট চলছে। চিকিৎসা ও শিক্ষাখাতে খুবই খারাপ অবস্থা। শিল্প বাণিজ্য সব খাতে খারাপ অবস্থা। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার নামে দেশে ডিজিটাল চুরি ও লুট করা হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশ ইন্টারনেটের গতির দিক দিয়ে আফগানিস্তানের চেয়েও পেছনে।

শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের তৃতীয় তলার মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। চিকিত্সকদের সংগঠন ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে “বাংলাদেশের বর্তমান গণতান্ত্রিক সংকট ও আমাদের করণীয়” শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে ড্যাব।

সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ডা. মো. মেহেদী হাসানের পরিচালনায় বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ড্যাবের মহাসচিব ডা. মো. আবদুস সালাম, বিএমএ‘র সাবেক সভাপতি একেএম আজিজুল হক, সাবেক মহাসচিব ডা. গাজী আব্দুল হক, পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরী, বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, সহ-সম্পাদক ডা. পারভেজ রেজা কাকন, সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, ড্যাবের উপদেষ্টা ডা. শহীদুর রহমান, সহ-সভাপতি ডা. ওবায়দুল কবির খান, ডা. সিরাজুল ইসলাম, ডা. শহীদুল আলম, ডা. মোস্তাক রহিম স্বপন, ডা. মহিউদ্দিন ভুঁইয়া মাসুম, কোষাধ্যক্ষ ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল, যুগ্ম মহাসচিব ডা. মো. শেখ ফরহাদ, ডা. শহীদুল হাসান বাবুল, ডা. আদনান হাসান মাসুদ, প্রকৌশলী মাহবুব আলম, ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম, প্রকৌশলী এমএ হানিফ, বিপ্লবুজ্জামান বিপ্লব, ডা. আজহারুল ইসলাম, ডা. আশফাক নবী কমল প্রমুখ। এসময় ড্যাবের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে কারাবন্দি বেগম খালেদা জিয়া। তার সুস্থতা কামনা করছি। তার অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দায়িত্ব পালন করছেন। তাকেও দূরে সরিয়ে রাখতে বহু বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। তার সহধর্মিণীকেও বানোয়াট অভিযোগে সাজা দিয়েছে। একটি অত্যাচারী অনির্বাচিত দায়হীন সরকারের পক্ষে সবকিছুই করা সম্ভব। সেটিই এখন হচ্ছে। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বর্তমান সরকারকে চায় না। কিন্তু সেটা প্রমাণের সুযোগ তাদের দেওয়া হচ্ছে না। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে দেশে কীভাবে নির্বাচন হয়েছে তা সবাই জানেন।

তিনি বলেন, বিএনপি আন্দোলন সংগ্রামে বিজয়ী হলে আবারও রাষ্ট্র পরিচালনায় যাবে। আজকে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে পাচার করলেও কোনো অভিযোগ নেই। ফরিদপুরের এক নেতা ২ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। সেটার কোনো বিচার নেই। আর খালেদা জিয়া একজন বয়স্ক মহিলা, দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তাকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দিচ্ছে না। জামিনও দিচ্ছে না। কারণ আওয়ামী লীগ শক্ত প্রতিপক্ষকে ভয় পায়। এজন্য তারেক রহমানকে ভয় পায়। একই কারণে ভয় পায় ডা. জুবাইদা রহমানকে। সেজন্যই তাকে দণ্ড দেওয়া হয়েছে। সেই দণ্ড দিতে গিয়ে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থাকে ব্যবহার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, মানুষ নিরাপদ আশ্রয় নেয় পুলিশের কাছে। কিন্তু তারা এখন একটি দলের লাঠিয়াল বাহিনীর ভূমিকা পালন করে। বিচার বিভাগের কাছে মানুষ ন্যায় বিচার আশা করে। সেখানেও একই অবস্থা। আবরার হত্যা মামলার আসামি ছাড়া পেয়ে যায়। অথচ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার কারণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী খাদিজাতুল কুবরা দীর্ঘদিন ধরে বন্দি।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই শেয়ারবাজার লুট হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক লুট হয়। অন্য সরকারের সময় হয় না। দেশের শতকরা ৫ ভাগ মানুষের হাতে ৯০ শতাংশ অর্থ। এই সময়ে সরকারের লোকেরা কোটিপতি হয়েছে আর নতুন করে সাড়ে তিন কোটি মানুষ নতুনভাবে দারিদ্র্য হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এই সরকার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো দিয়ে তথ্য গোপন করছে। প্রতিবছর শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। আজকে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে ক্ষুধার্ত থাকতে হয়।

তিনি বলেন, ডা. জুবাইদা রহমান তার মায়ের কাছ থেকে কিছু টাকা উপহার পেয়েছিলেন। সেগুলো ব্যাংকে রেখেছেন এবং রিটার্নও দিয়েছেন। তারপরও সরকার বলছে এটি তার টাকা নয়। অথচ জুবাইদা রহমান পারিবারিক সূত্রে স্বচ্ছল। তবুও তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। আসলে তাকে নানাভাবে হেয় করা হচ্ছে। যেমন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে নিয়ে এই সরকার করেছে।

সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, অথচ জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের কঠিন সংকটের সময় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে উই রিভোল্ট বলে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। তিনি প্রথম জেড ফোর্সের কমান্ডার হিসেবে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। আর সেই ব্যাক্তিকে হেয় করা হয় অভিযুক্ত করা হয়।

নজরুল ইসলাম খান আরও বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর নাকি জিয়াউর রহমান বেশি বেনিফিশিয়ারি। এসব অপপ্রচার। অথচ শফিউল্লাহ, খালেদ মোশাররফ ও এমএজি ওসমানীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। শুধু জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ। কারণ হলো তার বিরুদ্ধে জনগণের কোনো অভিযোগ নেই। ওই সময় আওয়ামী লীগ যেখানে ব্যর্থ সেখানে জিয়াউর রহমান সফল হয়েছিলেন।

তিনি বলেন, সেসময় দেশে কোনো শান্তি শৃঙ্খলা ছিলো না। তাদের সময় দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। তারা একদলীয় বাকশাল কায়েম করেছিলো। সেখানে জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কৃষির উন্নয়ন ঘটিয়ে বিদেশে চাল রফতানি করেছিলেন।

নজরুল ইসলাম বলেন, মানুষ বাঁচতে চায়। তারা পরিবর্তন চায়; যেখানে তারা বাঁচতে পারবে। আসুন মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য একটি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করি। সেজন্য আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের মাধ্যমে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হবে। সেই লক্ষ্যেই বিএনপির এক দফা আন্দোলন।

সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে পোস্ট অপারেটিভ ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারে পরিণত করেছে। এখন মানুষ স্বাভাবিক ভাবে চিন্তাও করতে পারছে না। মানুষ তারা ঠিকমতো খেতে পারছে না। এক ডিমের দাম ১৫ টাকা। মাছ মাংসের দাম তো সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। আসলে এসব দুর্ভিক্ষের ইঙ্গিত। চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজি লোকেরা আজ এমপি। এখন বাংলাদেশের চিকিৎসা দরকার। এটা যারা করেছেন তাদের বিদায় ছাড়া উপায় নেই।

তিনি বলেন, সরকার বিদেশিদের কথাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। সকালে গালাগালি করে বিকেলে গলাগলি করে।

অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ বলেন, আজকে বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ। আমরা তার অবিলম্বে মুক্তি ও সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। ড্যাব যে লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো সে মোতাবেক কাজ করছে। ইনশাআল্লাহ ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে এক দফার আন্দোলনে ড্যাব সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে আসছে এবং শেষ পর্যন্ত থাকব ইনশাআল্লাহ্। সেই সঙ্গে যেসব নেতাকর্মী আহত হয়েছেন তাদেরকে ড্যাব চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।

ডা. মো. আবদুস সালাম বলেন, অতীতের স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে পেশাজীবী সংগঠন হিসেবে ড্যাব রাজপথে থাকবে। এই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ও শেখ হাসিনার পতন ঘটানো পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকব। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে সাজা দেওয়ার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তিনি।

অন্য বক্তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানান।

(ঢাকাটাইমস/১২আগস্ট/জেবি/ইএস)


সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।