ছবি: নয়া দিগন্ত


ঢাকায় আন্দোলনের মাঠে ‘সোচ্চার ও সক্রিয়’ নেতাদের একে একে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় এক ডজন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যারা মহানগর বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন।
বিএনপির নেতাদের অভিযোগ, এক দফার আন্দোলন নস্যাতে বেছে বেছে মহানগরকেন্দ্রিক সক্রিয় নেতাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। তবে এতে আন্দোলনে কোনো প্রভাব পারবে না বলে তারা দাবি করেন।
তবে কেউ কেউ বলেছেন, গ্রেফতার হওয়া নেতাদের ‘আন্দোলন সক্ষমতা’ ইতোমধ্যে দলের কাছে পরীক্ষিত, প্রমাণিত। তাই চূড়ান্ত আন্দোলনের ‘শেষ ধাপ’ শুরুর মুহূর্তে এসব নেতাকে গ্রেফতার করার বিষয়টি ভাবাচ্ছে হাইকমান্ডকে। যদিও দলে প্রতিটি নেতারই যোগ্য রিপ্লেসমেন্ট রয়েছে বলে দাবি বিএনপির।
সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে গত ১২ জুলাই এক দফার আন্দোলনের ঘোষণা দেয় গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর থেকে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বিএনপি। এই পর্যন্ত বিএনপিসহ সমমনা জোট ও দলগুলো ঢাকায় পদযাত্রা, মহাসমাবেশ, ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান, গণমিছিল ও কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি করে। সর্বশেষ গত ২৪ ও ২৫ আগস্ট ঢাকাসহ সারা দেশে কালো পতাকা গণমিছিল করেছে তারা। আগামীকাল শনিবার ঢাকায় ফের গণমিছিল করবে বিএনপি ও যুগপতের শরিকরা।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সেপ্টেম্বরের শেষ দিক থেকে এক দফার আন্দোলনে ভিন্নতা আসবে। আর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার আগেই আন্দোলন সফল পরিণতিতে নিয়ে যেতে চায় দলটি। মধ্য অক্টোবরের মধ্যেই চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জন করতে চান তারা। তাই অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে ঘেরাওসহ লাগাতার কর্মসূচি আসতে পারে। অবশ্য এর আগে বিচার বিভাগ বা আদালতকেন্দ্রিক আরও কিছু কর্মসূচি নেয়া হতে পারেÑ যাতে দেশের বিচার বিভাগ নিয়ে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ সব মহলের নজরে আসে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, ঢাকামুখী আন্দোলন শুরুর পর থেকেই মাঠে সক্রিয় নেতাদের বেছে বেছে গ্রেফতার করা হচ্ছে। গত ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচির পর ২০ আগস্ট ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুকে গ্রেফতার করা হয়। এ ছাড়া গত কয়েক মাসে বিএনপির বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা-৪ আসনের সাবেক এমপি সালাহ উদ্দিন আহমেদ, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা শেখ রবিউল আলম রবি, যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর, আলী আকবর চুন্নু, ইউসুফ বিন জলিল (কালু), বর্তমান যুগ্ম-সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহীন, ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান মুসাব্বির, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। মজনু ও রবিন কারাগারে থাকলেও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপিতে এখনো কোনো রিপ্লেসমেন্ট দেয়া হয়নি।

মহানগর দক্ষিণে যখন এই অবস্থা, তখন মহানগর উত্তর বিএনপির নেতৃত্বেও এক ধরনের শূন্যতা দেখা দেয়ার উপক্রম হয়েছে। কারণ, দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান আগামী ১০ সেপ্টেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণ করতে পারেন বলে জানা গেছে । গত ৭ আগস্ট আমানের ১৩ বছরের সাজার রায় বহাল রাখেন উচ্চ আদালত। রায়ে বিচারিক আদালতে রায় পৌঁছানোর ১৫ দিনের মধ্যে তাকে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। বিএনপির দাবি, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আমানকে সাজা দেয়া হয়েছে।
এ দিকে মাঠের আন্দোলনে সোচ্চার দল ও অঙ্গ-সংগঠনের এসব নেতা গ্রেফতার হওয়ায় বিএনপি কিছুটা হলেও দুশ্চিন্তায় পড়েছে। যদিও বিএনপি থেকে বলা হয়েছে, প্রতিটি নেতারই যোগ্য রিপ্লেসমেন্ট রয়েছে। দলে নেতার কোনো ক্রাইসিস নেই।
মাঠের নেতাদের কেউ কেউ বলেছেন, ঢাকার রাজপথের আন্দোলনে সক্রিয় এসব নেতার যোগ্য রিপ্লেসমেন্ট সহজ ব্যাপার নয়। কারণ, প্রতিটি নেতারই প্রচুর সমর্থক, অনুসারী রয়েছে। তারা জানেনÑ তাদের কর্মী-সমর্থকদের কীভাবে সংগঠিত করে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে হয়। হামলা-মামলা হলে তারা তাদের পাশে দাঁড়ান, জামিনের ব্যবস্থা করেন। তাই শীর্ষ পর্যায়ের কোনো নেতা যখন মাঠে থাকেন না, তখন কর্মী-সমর্থকরা তার অভাব অনুভব করে, হতাশ হয়ে পড়ে। বিকল্প নেতৃত্বের পেছনে তাদের দিয়ে কাজ করানো তখন কঠিন হয়ে পড়ে।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে অতীতের মতো প্রশাসনকে ব্যবহার করে আবারও ক্ষমতায় থাকতে চায়। সে কারণে তারা মামলা-হামলা, অত্যাচার-নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে। তবে যতই মামলা-হামলা-গ্রেফতার করুক না কেন, আন্দোলন দমানো যাবে না। চলমান আন্দোলনের মধ্য দিয়েই সরকারের পতন ঘটবে বলে দাবি করেন তিনি।
মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার চলমান এক দফার আন্দোলন দমাতে সাংগঠনিকভাবে মাঠে যারা সক্রিয়, তাদেরকে বেছে বেছে গ্রেফতার করছে। জামিন হলেও পুরনো মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাদের কারাগারে আটক রাখা হচ্ছে। এটা জনবিচ্ছিন্ন এই সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকার একটা অপচেষ্টা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নেতাদের গ্রেফতার করা হলেও আগামীতে আন্দোলনে এর কোনো প্রভাব পড়বে না। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে পরিচালিত চলমান শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্য দিয়েই এই সরকারের পতন ঘটবে। সে লক্ষ্যে আমরা আমাদের সাংগঠনিক পরিকল্পনা মতো কাজ করছি।


   


সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।